হাওরাঞ্চল নেত্রকোনা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ সদর প্রতিনিধিঃ নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলের নদ - নদী , খাল - বিল , হাওর - ...
সদর প্রতিনিধিঃ নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলের নদ-নদী, খাল-বিল, হাওর-বাঁওড় থেকে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে প্রায় ৭০ প্রজাতির দেশীয় মাছ। প্রাকৃতিকভাবে বংশবিস্তার ছাড়াও নিজস্ব জলাশয়ে ব্যক্তি উদ্যোগে এসব প্রজাতির মাছচাষ হতো ব্যাপক। আধুনিক মাছচাষ পদ্ধতি, জমিতে ঝথেচ্ছ সার, কীটনাশক প্রয়োগ, জলাশয় ভরাট হয়ে যাওয়া, পোনা ও মা মাছ নির্বিচারে ধরা, জলাশয় শুকিয়ে মাছ ধরা এসব কারণে সু-স্বাদু পুষ্টিকর দেশীয় মাছগুলো দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছে। বিলুপ্তপ্রায় মাছগুলোর মধ্যে যেমন- দারকিনা, নাপিত, নানিদ, মাশুল, লাচো, কাউন্যা, কাশখয়রা, টাটকিনি, কালিবাউস, পাবদা, চিংড়ি, রয়না, সরপুটি, গাংচেলা, ডানকানা, বাজারি, বাতাশি, কানাফলি, বোয়াল, বাঁশপাতা, বাচা, খউড়্যা, বাগাইড়, মাগুর, জিয়ল, রূপচাঁদা, রাঙাচাঁদা, চাপলে, কালাবাটা, বামোশ উল্লেখ্য যোগ্য।
এক সময় নেত্রকোনার জলাশয়গুলো ছিল এসব পুষ্টিগুণের অসংখ্য মাছে ভরা। মৎস্য সংরক্ষণ আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় নির্বিচারে অবৈধভাবে রেণু পোনা, ডিম ও মা মাছ ধরার কারণে মাছে-ভাতে বাঙালি পরিচয় আর থাকছে না। বৈশাখ থেকে আষাঢ়ের মধ্যে পুকুর, খাল-বিল, নদ-নদী, হাওর-বাঁওড় নানা প্রজাতির মাছ ডিম ছাড়ে। এ সময় এক শ্রেণীর মাছশিকারিরা কারেন্ট জাল, কাঁথা জাল, সুতি জাল, ডেশাল জালসহ অন্যান্য উপকরণ দিয়ে রেণু পোনা ও ডিম সংগ্রহে নেমে পড়ে। অগ্রায়হণ ও পৌষে শ্যালো মেশিন দিয়ে পুকুর-খালা-নালা সেচে মাছ শিকার করে থাকে। ফলে পরবর্তী বংশ বংশবিস্তার শূন্যের কোটায় এসে দাঁড়ায়।
মাছ মানবদেহের আমিষ-পুষ্টি উপাদান এবং সম্পদ বিবেচনা করে, জাতীয়ভাবে ‘দ্য প্রকেটশন অ্যান্ড কনজারভেশন অফ ফিশ’ ১৯৫০ সালে এ আইনটি প্রণয়ন করা হয়। ১৯৮৫ সালে এ আইনে সংশোধন আনা হয়। এতে বলা হয়েছে, ফেব্রুয়ারী থেকে জুন পর্যন- ১২ ইঞ্চির নিচে সিলং, বোয়াল, আইড় জাতীয় মাছ ধরা ও পরিবহন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। মাছ চাষের উদ্দেশ্য ছাড়া নদী-নালা, খাল-বিল, হাওর-বাঁওড়স বিভিন্ন জলাশয়ের সঙ্গে সংযোগ আছে- এমন স্থানে ১ এপ্রিল থেকে ৩১ আগষ্ট পর্যন- শৈল, গজার ও টাকি মাছের পোনার ঝাঁক ও দম্পতি মাছধরা নিষেধ থাকলেও তা কেউ মানছে না। মাছ কমে যাওয়ায় অনেক জেলে পৈত্রিক মাছ ধরা পেশা ছেড়ে কৃষি, ব্যবসাসহ বিকল্প পেশাকে গ্রহণ করছে।
অন্যদিকে বোরো মৌসুমে জেলার ডিঙ্গিউথা, কীত্তর্ণখেলা, জালিয়া হাওরের অতিমাত্রায় তীব্র বিষ দানাদার ও তরল কীটনাশক ব্যবহার করে কৃষকরা ধানের মাজরাসহ কীট-পতঙ্গ ধ্বংস করে থাকেন। এর প্রতিক্রিয়া ও প্রভাব দীর্ঘ সময় থাকার দরুন মাছের বংশবিস্তারের চরম ক্ষতি করে থাকে। নেত্রকোনা জেলা কৃষি অফিস সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকার ডায়াজিন-১৪ জি, ডাইমেক্রম-১০০ ইসি ও বাইড্রিন-৫৭ ইসি নামে দানাদার ও কীটনাশক নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। যা এলাকার কৃষকদের জানানোর পরও কেউ মানছে না।
জেলার বৃহত্তম ডিঙ্গিউথা হাওরপাড়ের খুরশিমুল গ্রামের ব্যবসায়ী টুটন, অজয় দাস, ডাঃ ইমাম হোসেন, সোনামোহন দাস, মল্লিকপুর গ্রামের জেলে মানিক, গণেষ ও জগদ্বীশ বলেন, হাওরে মেলা (অনেক) মাছ থাকায় আমরার পূর্বপূরুষরা মাছ খেয়ে সুখেই দিন কাডাইত। এহন (এখন), মাছ কইম্মা যাওয়ায় মাছ দরা বাদ দিয়া অনেকেই গিরসি' (কৃষি কাজ) করছে। দেশের মৎস্য ভান্ডার হিসেবে পরিচিত এ এলাকার মাছ নিজস্ব চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার চাহিদা মিটাত। অভিজ্ঞ ও সচেতন মহল এলাকাটিকে পুনরায় দেশীয় মাছের ভান্ডার হিসেবে গড়ে তুলতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করছেন।
COMMENTS