দূর্গাপূর প্রতিনিধি: নেত্রকোনা জেলার সীমান্তে অবস্থিত দূর্গাপুর সোমেশ্বরী নদীর তীরে আদিবাসী নৃ-গোষ্টীর এলাকা বলে পরিচিত। গারো, হাজং, ক...

দূর্গাপূর প্রতিনিধি: নেত্রকোনা জেলার সীমান্তে অবস্থিত দূর্গাপুর সোমেশ্বরী নদীর তীরে আদিবাসী নৃ-গোষ্টীর এলাকা বলে পরিচিত। গারো, হাজং, কোচ, বানাই, হদি, ঢালু, রাজবংশী আদিবাসী ও বাঙালিদের সহবস্থান এখানকার জীবন-যাপনকে করেছে বৈচিত্র্যপূর্ণ। বিজয়পুরের পাহাড়, টিলা ও সমতল ভূমিতে আছে বিপুল পরিমাণ সাদামাটি। যাকে এলাকার লোকেরা ‘সাদা সোনা’ বলে থাকেন। এ সাদামাটি ৯ টি কোম্পানী বছরের পর বছর ধরে নির্বিচারে উত্তোলন করে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করছে। বঞ্চিত হচ্ছে বিজয়পুরবাসী তাদের নিজ এলাকার অমূল্য খনিজ সম্পদ থেকে।
এলাকা সূত্রে জানা যায়, বিজয়পুরে শতাব্দী ধরে আদিবাসীরা বাস করে আসছে। আইন অমান্য করে কোম্পানীগুলো অবাধে সাদামাটি উত্তোলনের ফলে অনেক আদিবাসী পরিবার হারিয়েছে তাদের বসতবাড়ি। খনির তলদেশে শিশুসহ প্রাণ দিয়েছে এ পর্যন্ত আট জন। আদিবাসী রঞ্জিত ত্রিয়ের তথ্য মতে, নিহতরা হচ্ছেন- ছনগড়া গ্রামের রামকুমার দেবর্ষির ছেলে রিত হাজং, গাইমারা গ্রামের ধেরীজ রেসার ছেলে লফজ রিসিল, গুচ্ছগ্রামের বীরেশ স্নালের ছেলে জুয়েল তজু, গাইসারা গ্রামের দানিয়েল রেমার ছেলে দিগন্ত স্নাল ও মাইজপাড়া গ্রামের বেনেডিক্ট রুরালের ছেলে দিলীপ মানকিন সহ এলাকার অজ্ঞাত আরো তিন জন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে অপরিকল্পিত ভাবে মাটি উত্তোলন করার ফলে কামারখালি বাজার থেকে চারুয়াপাড়া পর্যন্ত রাস্তা ভেঙ্গে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। মাটি উত্তোলনকারী এসব কোম্পানী মাটি উত্তোলনে খনি এলাকার সরকারি আইন অমান্য করছে। এজন্য কোটি কোটি টাকা মূল্যের মাটির অপচয় হচ্ছে, ব্যবহারও সুষ্টুভাবে হচ্ছে না। দিন দিন বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে এলাকার প্রকৃতি ও পরিবেশ।
দূর্গাপূরের আদিবাসী রঞ্জিত ত্রিয় ও ব্যবসায়ী মোঃ বাচ্চু মিয়া জানান, দূর্গাপুরের সাদা মাটি অর্থাৎ সাদা সোনা উত্তোলন করে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সাদা মাটি পাওয়া যাচ্ছে নেত্রকোনা বিজয়পুরে। অথচ আজ পর্যন্ত স্থানীয়ভাবে সেখানে গড়ে উঠেনি মৃত্তিকা ভিত্তিক কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান। যেখানে হতে পারতো শত শত লোকের কর্মসংস্থান। বিজয়পুর হতো শিল্পোন্নত একটি বাণিজ্যিক এলাকা।
এলাকাবাসীর দাবী, বিজয়পুরের সাদা সোনা উত্তোলনে সরকারী নীতিমালা মেনে চলতে কোম্পানীগুলোকে বাধ্য করা প্রয়োজন। এতে করে রা পাবে আদিবাসীদের বসত বাড়ী। দূর্ঘটনায় খনি গর্ভে জীবন দিতে হবে না আর কোন আদিবাসীর। বিজয়পুরের উপযুক্ত স্থানে মৃত্তিকা শিল্প গড়ে তুললে তা এলাকার অর্থনীতিতে বলিষ্ট ভূমিকা রাখবে।
দূর্গাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান সায়দুল হোসেন আকুঞ্জি জানান, আদিবাসীদের খনি গর্ভে মৃত্যু ঠেকানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ইতোমধ্যে আবেদন পত্র পাঠানো হয়েছে। এর কোন প্রতি উত্তর আমরা এখন পর্যন্ত পাইনি। সাদা মাটি উত্তোলনে আদিবাসীদের মৃত্যু ও ঘরবাড়ি ধ্বসে পড়ার বিষয়টি অমানবিক।
COMMENTS